শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
কি ঘটেছে সৌদি আরবের নাগরিক ও সাংবাদিক জামাল খাসোগির ভাগ্যে! তিনি কোথায়! কি পরিণতে হয়েছে তার! তুরস্কের আঙ্কারায় সৌদি আরবের কনসুলেটে যাওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। এ রহস্যের কোনো উত্তর বেরিয়ে আসছে না। এ ঘটনায় তুরস্কে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে তুরস্ক সরকার।
সৌদি আরবের নাগরিক ও সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের একজন প্রদায়ক। তার আরও একটি পরিচয় আছে। তা হলো, তিনি সৌদি আরবের রাজা বা রাজতন্ত্রের কড়া সমালোচক। এ জন্যই কি তাকে গায়েব করে দেয়া হয়েছে! এমন আলোচনা এখন চারদিকে।
তবে সৌদি আরবের কনসুলেট থেকে বলা হয়েছে, কয়েকদিন আগে খাসোগি কনসুলেটে ঢোকার পর বেরিয়ে গেছেন। কিন্তু তার প্রেমিকা ও তুরস্ক সরকার এমন তথ্য অস্বীকার করছে। তারা বলছে, খাসোগি ওই কনসুলেটে প্রবেশের পর আর বেরিয়ে আসেন নি। এমন কি তার পক্ষ থেকে কোনো বার্তাও পাওয়া যায় নি। তাহলে জামাল খাসোগি কোথায়!
ইস্তাম্বুল থেকে অনলাইন সিএনএন লিখেছে, জামাল খাসোগি একজন স্বনামখ্যাত সাংবাদিক ও সৌদি আরবের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর কড়া সমালোচক। গত মঙ্গলবার বিকালে তিনি ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটে প্রবেশ করেন। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ। এরপর বুধবার তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলেন, ওই ভবনের ভিতরেই আছেন খাসোগি। তবে তার এ বক্তব্য সৌদি আরবের বক্তব্য বা বিবৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জামাল খাসোগি বিয়ে করতে চান। তার প্রেমিকা একজন তুর্কি নাগরিক। তিনি যাতে বিয়ে করতে পারেন এ জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে জামাল খাসোগি গিয়েছিলেন সৌদি আরবের কনসুলেটে। সিএনএন আরো লিখেছে, সৌদি আরবের নেতারা সমালোচকদের যখন গ্রেপ্তার চালিয়ে যাচ্ছে তেমন সময়েই নিখোঁজ হলেন জামাল খাসোগি। আর এই গ্রেপ্তারের নেপথ্যে রয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। বলা হচ্ছে, তার নির্দেশে ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, অধিকারকর্মীদের আটক করা হয়েছে। এ বছরের শুরুতে নারীদের অধিকার বিষয়ক কর্মী লুজাইন আল হাথলুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে। তারপর সেখান থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে সৌদি আরবে। দেশে আনার পর তাকে কয়েক মাস জেল দেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর এক সময়ের কড়া সমালোচক জামাল খাসোগি দেশ ছাড়েন ২০১৭ সালে। দেশের পরিস্থিতিকে তিনি ওই সময় অসহনীয় হিসেবে ওয়াশিংটন পোস্টের এক মতামত কলামে উল্লেখ করেন। তিনি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্রমাগত ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন।
ওদিকে পানি যখন ঘোলা হয়ে উঠেছে তখন বুধবার ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেট থেকে বলা হয়েছে, জামাল খাসোগি নিখোঁজ ঘটনা তারা তদন্ত করে দেখছে। তবে ওই বিবৃতিতে কনসুলেট দাবি করে জামাল খাসোগি তার কাজ শেষ করে কনসুলেট ত্যাগ করেছেন। কনসুলেট থেকে আরো বলা হয়, খাসোগি কনসুলেট থেকে চলে যাওয়ার পর তার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তুরস্কের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছেন তারা।
ওদিকে জামাল খাসোগির প্রেমিকা সিএনএনকে বলেছেন, তিনি ঘটনার পর থেকেই ওই কনসুলেটের বাইরে অপেক্ষা করছেন। তার দাবি, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে কনসুলেটে প্রবেশ করেন জামাল। তারপর সেখান থেকে তিনি বেরিয়ে আসেন নি। এমন অভিযোগের পর ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করেছে তুরস্কের পুলিশ। তাতে তাতে জামাল খাসোগির কনসুলেট ত্যাগ করা বা কনসুলেট থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ মেলে নি। এমন অবস্থায় জামাল খাসোগির নিরাপদ মুক্তি নিশ্চিত করতে জনগণের পক্ষ থেকে ও মিডিয়ার পক্ষ থেকে কনসুলেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে এবং তারা কনসুলেটের বাইরে অবস্থান করেই যাবেন। ওদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের মতামত বিষয়ক সম্পাদক ইলি লোপজে বলেছেন, জামাল কি ওই কনসুলেটের ভিতরে আছেন কিনা আমরা জানি না। আমরা জানতে চাই জামাল কোথায় আছেন।
জামাল খাসোগির প্রণয়ী বলেছেন, তারা ( সৌদি আরব) কি তাকে আটক করেছে? তারা কি তাকে অপহরণ করেছে? তিনি কি বন্দি হয়েছেন? তিনি কি খাচ্ছেন? কি পান করছেন? তার ক্ষেত্রে কি এমনটা হওয়ার কথা? তিনি তো কোনো সন্ত্রাসী নন। তিনি একজন বিশ্লেষক ও সাংবাদিক।